ঝুঁকির উৎস

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা | | NCTB BOOK

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সিদ্ধান্তের সাথে কিছু না কিছু ঝুঁকি জড়িত থাকে। এসব ঝুঁকির কারণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ফলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে এসব ঝুঁকি যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য এসব ঝুঁকির উৎস ও শ্রেণি খুঁজে বের করা জরুরি। এ ব্যাপারে কারবারের প্রেক্ষাপট আর বিনিয়োগকারীর প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নিচে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকির উৎস আলোচনা করা হলো।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিকোণ থেকে

ক) ব্যবসায়িক ঝুঁকি : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সফলভাবে চালানোর জন্য বিভিন্ন রকম পরিচালনা ব্যয়ের সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচামাল ক্রয়, শ্রমিকদের বেতন, অফিস ভাড়া, বিমা খরচ ইত্যাদি। এসব পরিচালনা খরচ পরিশোধের অক্ষমতা থেকে ব্যবসায়িক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। কোনো কোম্পানির পরিচালনা ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নির্ভর করে বিক্রয় থেকে আয়ের স্থিতিশীলতা এবং পরিচালনা খরচের মিশ্রণ অর্থাৎ 

স্থায়ী এবং চলতি খরচের অনুপাতের উপর। বিক্রয় আয়ে স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থাৎ বিক্রয়লব্ধ কোনো সময় আয় বেশি আবার কোনো সময় কম হলে, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যয় মেটাতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় । আবার পরিচালন ব্যয়ে স্থায়ী খরচ যেমন: অফিস ভাড়া, বিমা খরচ ইত্যাদির পরিমাণ বেশি হলে ব্যবসায়িক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। যদি কোম্পানিটি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে অর্থাৎ কোম্পানি কোনো বহিস্থ অর্থায়ন না করে তখন মুনাফাসংক্রান্ত এই অনিশ্চয়তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলে। এর উৎস হিসেবে বিক্রয়মূল্য পরিবর্তন, বিক্রয় পরিমাণ পরিবর্তন, উৎপাদনের উপকরণের মূল্য পরিবর্তন, অতিরিক্ত স্থায়ী খরচের প্রবণতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

খ) আর্থিক ঝুঁকি : এই ধরনের ঝুঁকি বহিস্থ উৎস থেকে অর্থায়ন থেকে সৃষ্টি হয়। যে প্রতিষ্ঠানের ঋণের মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল বেশি, সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঝুঁকি বেশি। কারণ ঋণ মূলধনের জন্য সুদ প্রদান করা বাধ্যতামূলক। পক্ষান্তরে, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হলে মুনাফা বণ্টন বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং ঋণ মূলধন ব্যবহার করা হলে কারবারটি যদি লাভজনক না হয়, তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আইনের আশ্রয় নিতে পারে এবং ফলে কারবারটির বিলোপসাধন হতে পারে। ঋণ মূলধন ব্যবহার করলে সুদ এবং উক্ত অর্থ পরিশোধের দায় সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানি যদি ১৫% হারে ৫০ লক্ষ টাকার ৫ বছর মেয়াদি বন্ড বিক্রয় করে, তাহলে প্রতিবছর ৭,৫০,০০০ টাকা সুদ এবং পাঁচ বছর শেষে ৫০ লক্ষ টাকা পরিশোধের দায় সৃষ্টি হয়। কোম্পানি সাধারণত ঋণকৃত মূলধন বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত নগদ প্রবাহ দিয়ে ঋণকৃত মূলধনের দায় পরিশোধ করে। কোনো কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ না পেলে দায় পরিশোধের অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন দায় পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ সরবরাহকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে এবং কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে ফলে এরূপ দায় পরিশোধের অক্ষমতা থেকে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়, তাকে আর্থিক ঝুঁকি বলা হয়।

বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে

ক) সুদ হারের ঝুঁকি : যেসব বিনিয়োগকারী বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ক্রয় করে, তাদেরকে সুদ হারের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয়। কারণ বাজারে সুদের হারের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের বিনিয়োগের মূল্য উঠা-নামা করে। সুদের হার বাড়লে এসব বিনিয়োগের অর্থাৎ বন্ড, ডিবেঞ্চারের বাজারমূল্য কমে, আবার সুদের হার কমলে এসব বিনিয়োগের বাজারমূল্য বাড়ে। সুদের হারের পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের মূল্য হ্রাসের আশঙ্কাকেই সুদ হারের ঝুঁকি বলা হয়।

খ) তারল্য ঝুঁকি : বিনিয়োগকারীর অর্থ শেয়ার,বন্ড বা ডিবেঞ্চার ইত্যাদিতে বিনিয়োগের পর যেকোনো সময় এসব বিনিয়োগ নগদায়নের প্রয়োজন হয়। আশা করা হয়, বিনিয়োগকারী এসব বিনিয়োগ যুক্তিসংগত মূল্যে বিক্রয় করে নগদায়ন করতে পারবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি বিনিয়োগকারী সহজে এবং যুক্তিসংগত মূল্যে বিক্রয় করতে না পারে, তখন তারল্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তারল্য ঝুঁকি সাধারণত যে বাজারে এসব বিনিয়োগ যথা: শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি কেনাবেচা হয়, সে বাজারের আকার এবং কাঠামোর উপর নির্ভর করে। একমালিকানা ও অংশীদারি কারবারে তারল্য ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে কারবারটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সহজে ও যুক্তিসংগত মূল্যে বিক্রয় করা যায় না। পক্ষান্তরে, একজন বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনলে, তাকে তারল্য ঝুঁকি নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। কারণ সে ইচ্ছে করলে যেকোনো সময় সেকেন্ডারি মূলধন বাজার বা শেয়ার মার্কেট গিয়ে তার শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে। মূলধনি বাজারে কোন বিনিয়োগকারী যদি কোম্পানির বন্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয় করে, ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে নিয়োজিত থাকে সেক্ষেত্রে তারল্য ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করতে হয়। কারণ আমাদের সেকেন্ডারি মূলধনি বাজারে যত সহজে শেয়ারের ক্রেতা পাওয়া যায়, তত সহজে বন্ড-ডিবেঞ্চারের ক্রেতা পাওয়া যায় না। তাই সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকে নগদায়ন করা সময়সাধ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।

Content updated By
Promotion